গাইবান্ধার
ফুলছড়ি উপজেলার
চরাঞ্চলের
বালুময়
চরের
পতিত
জমিকে চাষাবাদের
উপযোগী করে মিষ্টি কুমড়া চাষ
করেছেন
তিন
শতাধিক
নারী।
ইতিমধ্যে তাদের
এ
প্রচেষ্টার আশানুরুপ সাফল্যও অর্জিত
হয়েছে। নারীদের এ সাফল্য
দেখে চরাঞ্চলের অন্যরাও
মিষ্টি কুমড়া চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।
ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত
ফুলছড়ি উপজেলার
গজারিয়া ইউনিয়নের নীলকুঠি,
কাতলামারী, উদাখালী ইউনিয়নের
সিংড়িয়া, উড়িয়া ইউনিয়নের রতনপুর,
কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের ভাষারপাড়া,
রসুলপুর, সৈয়দপুর এলাকায় ২০০৯
সালে জেগে ওঠে ছোট-বড় অসংখ্য চর।
এসব চরে বালু মাটিতে কোন ফসল
উৎপন্ন হতো না। উত্তরাঞ্চল ভিত্তিক
বেসরকারি সংস্থা গণউন্নয়ন কেন্দ্র
এখানকার তিন শতাধিক দরিদ্র
নারীকে প্রথমে মিষ্টি কুমড়া চাষের
বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করে।
পরে সংস্থাটির আর্থিক
সহায়তা নিয়ে এসব নারী ওই বালুময়
চরের পতিত জমিকে চাষাবাদের
উপযোগী করে চরাঞ্চলে মিষ্টি কুমড়া চাষ
শুরু করে। দুইহাত পর পর বালি তুলে গর্ত
করে সেখানে বেঁলে দোঅাঁশ
মাটি দিয়ে উঁচু করে বিঘার পর
বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার বীজ
বুনেন তারা।
বর্তমানে বালুচরে পড়ে আছে উৎপাদিত
শত শত হলুদ রঙের মিষ্টি কুমড়া।
যা দেখে যে কারো মন কারবে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়,
উপজেলার চরাঞ্চলের গরীব
পরিবারগুলোর অনেকেই এখন স্বপ্ন
দেখছেন স্বচ্ছলতার
সাথে সামনে এগিয়ে
যাওয়ার। সাত ইউনিয়নের উপর
দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদীর
বিস্তীর্ণ এলাকায় শুষ্ক
মৌসুমে কোনো পানি থাকে না।
যেদিকে তাকানো যায় শুধু বালি আর
বালি। কিন্তু সেই ধু ধু বালুচরে স্বপ্ন
গেড়ে গেড়ে কৃষকরা তুলে আনছেন
সোনার ফসল। ফলে কৃষাণীদের
মুখে হাসি লেগে আছে প্রতিটি মুহূর্তে।
এক সময় ব্রহ্মপুত্র নদীর
চরে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো কাশিয়ার
জায়গা এখন দখল
করে নিয়েছে বিভিন্ন ধরণের ফসল।
বালুময় চরে এখন ধান, পাট, গম, সরিষা,
আলু, কুমড়া, বাদামসহ উৎপাদন
হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফসল। বিভিন্ন
এলাকা ঘুরে এবং নারী কৃষাণীদের
সঙ্গে কথা বলে জানা গেল তাদের
সংগ্রাম ও সাফল্যের নেপথ্য
কাহিনী। আর এ নেপথ্য কাহিনীর
বাস্তবায়নকারী হচ্ছে গাইবান্ধার
বেসরকারি সংস্থা গণউন্নয়ন কেন্দ্র।
এতে কারিগরি সহায়তা করছে পিএফপি সিড়ি প্রকল্প
ও প্র্যাকটিক্যাল এ্যাকশন
বাংলাদেশ। উপজেলার নীলকুঠি,
কাতলামারি, উড়িয়া, সিংড়িয়া,
বালাসী ও ভাষারপাড়া এলাকায়
বাণিজ্যিকভাবে চাষ
করা হয়েছে মিষ্টি কুমড়ার।
প্রতিটি গাছে মিষ্টি কুমড়া ধরেছে ৩
থেকে ৪টি। একেকটি কুমড়ার ওজন ১২
থেকে ১৪ কেজি, কোনটির আবার ৩৫
কেজিরও বেশি। রসহীন
বালুচরে আশানরুপ ফলন
পেয়ে কুমড়া চাষিদের চেহারায়
পড়েছে স্বচ্ছলতার ছাপ।
উল্লেখিত গ্রামের ৩২৫ পরিবারের
মধ্য থেকে ৩২৫ জন সদস্যকে এই
মিষ্টি কুমড়া চাষে সম্পৃক্ত
করা হয়েছে। তাদের মাধ্যমে ৩২
হাজার ৫শটি মিষ্টি কুমড়ার গাছ
লাগানো হয়েছে। ১শ’ গাছের
প্রতিকুলে প্রয়োজনীয় পরিমাণ গোবর
সার, ইউরিয়া-পটাশ, বীজ, পানির
ব্যবস্থা ও নদী পারাপারের জন্য
নৌকাভাড়াসহ প্রত্যেক সদস্যের ব্যয়
হয়েছে ৭ থেকে সাড়ে ৭ হাজার
টাকা। চরাঞ্চলের নারীরা কম খরচে ও
স্বল্প পরিশ্রমে ফলন
পেয়ে তা বাজারে বিক্রি করে কমপক্ষে ১২
থেকে ১৪ হাজার টাকা আয়
করে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পারবে।
চরাঞ্চলের ওইসব
গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, যত দূর চোখ
যায় তত দূর শুধু মিষ্টি কুমড়া আর
মিষ্টি কুমড়া।
কৃষাণীরা জমি থেকে মিষ্টি কুমড়া তুলছে।
তা বাজারে বিক্রি করলেই তাদের
হাতে আসবে কাঁচা টাকা।
সিংড়িয়া গ্রামের
মিষ্টি কুমড়া চাষী আদুরী বেগম
জানান,
জমি থেকে যাতে মিষ্টি কুমড়া চুরি না হয়ে যায়
সেজন্য পাহারা দেওয়ার
ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর
পাহারাদারের কাজ করছেন ওই
মহিলাদের স্বামীরা।
পালাক্রমে তারা রাতে এ দায়িত্ব
পালন করে থাকেন বলে জানা যায়।
নারীদের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা এসব
মিষ্টি কুমড়া বাগান দেখে সবাই
অভিভূত।
উদাখালী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল
বাকী সরকার বলেন, চরাঞ্চলের পতিত
বালুময় জমিতে ফসলের চাষ করে প্রচুর
অর্থ পাওয়া সম্ভব তা কৃষকদের
ধারণা ছিলো না। কিন্তু এখন ধু-ধু
বালুচরে নারীরা মিষ্টি কুমড়ার চাষ
করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
নারীরাও হয়েছে স্বাবলম্বী।
সিড়ি প্রজেক্টের ফিল্ড
ফ্যাসিলিটেটর ফাতেমা বেগম
জানান, গণ উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে ৩২৫
পরিবারের মাঝে মোট ৩২ হাজার
৫০০টি বিদেশী মিষ্টি কুমড়ার
চারা বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।
পাশাপাশি তাদের বীজ, সার,
শ্যালো মেশিনের তেল খরচেরও
টাকা দেয়া হয়। প্রকল্পের ফিল্ট কো-
অর্ডিনেটর সাইফুল আজাদ বলেন,
নদীভাঙ্গন কবলিত হতদরিদ্র
পরিবারের সদস্যদের আয় বৃদ্ধিমূলক
কর্মকান্ডে অন্তর্ভুক্ত
করে চরাঞ্চলে মিষ্টি কুমড়া চাষ
কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এতে নারীরা স্বল্প পরিশ্রমে ফলন
পেয়ে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও
পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পারবে।
ফুলছড়ি উপজেলা কৃষি অফিসার মো:
ইউসুফ রানা মন্ডল বলেন, এখানকার
নারীরা পতিত বালুময়
চরে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে এলাকায়
কৃষি ক্ষেত্রে রীতিমতো সাফল্যের
জোয়ার বয়ে এনেছে। কৃষি বিভাগের
পক্ষ থেকে ওই সব কৃষাণীদের
সহায়তা ও পরার্মশ দেয়া হচ্ছে।