চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায়
অবাধে এবং প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে বিএসটিআইয়ের
অনুমোদনবিহীন কথিত যৌন উত্তেজক
সিরাপ। নানা লোভনীয় নামে বিভিন্ন
ব্র্যান্ডের এসব সিরাপের
প্রতি আসক্তি বাড়ছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন
বয়সী ছাত্রছাত্রী, তরুণ-তরুণীদের মধ্যে।
অনেকে ইয়াবার বিকল্প হিসেবে শরীরের
উত্তেজনা বাড়াতে এসব সিরাপ
পানে আসক্ত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন
এলাকা ঘুরে এবং অনুসন্ধান
করে জানা গেছে, শহরের আনাচকানাচে,
অলিগলিতে যেকোনো দোকানে হাত
বাড়ালেই মিলছে বিভিন্ন নামের কথিত
যৌন উত্তেজক সিরাপ। প্রশাসনের
চোখকে ফাঁকি দিয়ে ডিপার্টমেন্ট স্টোর
থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অলিগলির চায়ের
দোকানেও প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে এসব
সিরাপ।
শহরের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা ছোট
ছোট অন্ধকার রেস্টুরেন্টে চলছে এর ব্যাপক
বিক্রি। বি-জিনসিন, জিনসিন প্লাস,
জিন্টার, হর্স ফিলিংস, লিডার, রুচিতা, মুন
পাওয়ার ফিলিংস, ভিগো-বি, ম্যান
পাওয়ার (স্বচ্ছ তরল), ম্যান পাওয়ার (অস্বচ্ছ
তরল), হর্স ফিলিংস, রয়েল টাইগার, ব্ল্যাক
হর্স ও স্পিড অ্যাকটিভ পাওয়ার ফিলিংস,
জাদু ইত্যাদি নামে কথিত যৌন উত্তেজক
সিরাপ বাজারে মিলছে। ২০ থেকে ৮০
টাকার মধ্যে এসব সিরাপ যে কেউ
কিনতে পারছে সহজেই।
দাম কম এবং সংগ্রহ সহজ হওয়ায় বিভিন্ন
স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা অবাধে এসব
সিরাপ পান করে আসক্ত হয়ে পড়ছে। হাল
ফ্যাশনের আধুনিক তরুণ-তরুণীদের আকৃষ্ট
করতে এসব সিরাপে নামী-
বেনামি নানা কোম্পানির নাম ও
মনোগ্রাম ব্যবহার করে সিরাপের
প্যাকেটের গায়ে আকর্ষণীয় চীনের
জিনসিন গাছ, ঘোড়া, বাঘ, মাশরুমের
ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে। আকর্ষণীয় স্টিকার
এবং প্রদর্শনীতে ক্রেতারাও আকৃষ্ট হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের
চকবাজার, বহদ্দারহাট, জিইসির মোড়,
খুলশী, ফয়’স লেক এলাকা, আগ্রাবাদ,
হালিশহর, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকাসহ
বিভিন্ন ফাস্টফুডের দোকানেও যৌন
উত্তেজক সিরাপ হিসেবে খ্যাত
নানা ব্র্যান্ডের এনার্জি ড্রিংকস
বিক্রি হচ্ছে। নগরীর চকবাজার, খুলশী,
জিইসির মোড়, ফয়’স লেক এলাকাসহ
বিভিন্ন
নিরিবিলি পার্কে কিংবা আলো-
আঁধারীর বিভিন্ন হোটেলের ভেতর স্কুল-
কলেজের ছাত্রছাত্রী এবং বিভিন্ন বয়সের
তরুণ-তরুণীরা এসব ড্রিংকস পান
করে নানা অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত
হচ্ছে।
চট্টগ্রামের
একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক
রায়হানুল হক রাইজিংবিডিকে বলেন,
এনার্জি ড্রিংকস নামে যেসব পানীয়
বিক্রি হচ্ছে, তা হচ্ছে স্রেফ সাময়িক
উত্তেজনা সৃষ্টিকারী পানীয়। এর
মধ্যে রয়েছে অ্যালকোহল (মদ)। বোতলজাত
বা টিনজাত উপাদানের তালিকায় এই
অ্যালকোহলের আধুনিক নাম
দেওয়া হয়েছে ‘এনার্জি’। এগুলো পান করার
পর শরীরে সাময়িকভাবে ভিন্ন ধরনের
উত্তেজনা সৃষ্টি করে। যারা নিয়মিত খায়
তারা ধীরে ধীরে এতে আসক্ত হয়ে পড়ে।
এসব সিরাপ নিয়মিত পান করলে কিডনি,
লিভার, ফুসফুসসহ অন্যান্য
অঙ্গপ্রত্যঙ্গে নানা জটিল রোগ সৃষ্টি হয়।
এসব সিরাপ মানবদেহের জন্য অত্যন্ত
ক্ষতিকর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক
দোকানি জানান, হাটবাজারের
অধিকাংশ দোকানে এসব বিক্রি হচ্ছে।
অনেকে জেনে না জেনে পান করছে এসব
পানীয়। স্কুল-কলেজের
ছাত্রছাত্রী এবং তরুণ-তরুণীরা এসব
পানীয়র প্রধান ক্রেতা বলে একাধিক
বিক্রেতা জানান। প্রকৃত অর্থে এসব
এনার্জি ড্রিংকসের বিএসটিআইয়ের
অনুমোদন না থাকলে ড্রিংকসের
মোড়কে বা বোতলে অবৈধভাবে বিএসটিআইয়ের
সিল ব্যবহার করেছে উৎপাদনকারীরা।
চট্টগ্রাম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের
একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ
না করার শর্তে রাইজিংবিডিকে বলেন,
বাজারে বিক্রি হওয়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের
এনার্জি ড্রিংকস নামের যৌন উত্তেজক
সিরাপের রাসায়নিক
পরীক্ষা করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ
অধিদপ্তর থেকে একটি প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন
অনুযায়ী ভিগো-বি, ম্যান পাওয়ার (স্বচ্ছ
তরল), ম্যান পাওয়ার (অস্বচ্ছ তরল), হর্স
ফিলিংস, রয়েল টাইগার, ব্ল্যাক হর্স ও
স্পিড নামের সাতটি পানীয়তে স্বাস্থ্যের
জন্য ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে।
পানীয়গুলোর মধ্যে প্রথম
চারটিতে ‘অপিয়াম অপিয়েট’ ও
‘সিলডেনাফিল সাইট্রেট’ নামের
রাসায়নিক দ্রব্য পাওয়া গেছে। এ দুটি দ্রব্য
‘ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ, ১৯৮২’
অনুযায়ী নিষিদ্ধ। পরের
তিনটি পণ্যে পাওয়া গেছে উচ্চমাত্রার
ক্যাফেইন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ
অধিদপ্তরের ক্ষতিকর উপাদান
মেশানো এসব পানীয় কোম্পানির
বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপিয়েট একধরনের
নেশা বা নির্ভরতা সৃষ্টিকারী উপাদান।
এমন উপাদানমিশ্রিত পানীয় পান
করলে শরীরের ভেতরে এমন
অবস্থা তৈরি হয়, যখন শরীর উন্মুখ
হয়ে থাকে কখন ওই উপাদান পাওয়া যাবে।
আর সিলডেনাফিল সাইট্রেট
ধীরে ধীরে যৌনশক্তি নিঃশেষ
করে ফেলতে পারে।
বিএসটিআইয়ের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক
অফিসের উপপরিচালক মো
. হানিফ বলেন,
‘আমরা বিভিন্ন সময়ে অভিযান
পরিচালনা করে অনুমোদনহীন এসব যৌন
উত্তেজক সিরাপ উদ্ধার করে বিক্রেতাদের
বিরুদ্ধে মামলা ও জরিমানা করে থাকি। এ
ছাড়া এর উৎপাদকদের বিরুদ্ধেও বিএসটিআই
একাধিক মামলা করেছে।’