পাবনা প্রতিনিধি :
১৯৭১ সালের এই
দিনে পশ্চিমবঙ্গের
কলকাতায়
পাকিস্তানি দূতাবাসে প্রথম
বাংলাদেশের
পতাকা উড়িয়ে দেশের জন্য বিরল
সম্মান নিয়ে এসেছিলেন তৎকালীন
কলকাতার ডেপুটি হাইকমিশনার
পাবনার কৃতী সন্তান প্রয়াত এম
হোসেন আলী।
তবে বিদেশের মাটিতে প্রথম
স্বাধীন বাংলাদেশের
পতাকা ওড়ানোর জন্য
কোনো সম্মাননা জোটেনি মুক্তিযুদ্ধ
এই সংগঠকের ভাগ্যে।
মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ
বিদেশি বন্ধুদের
দেশে এনে দেওয়া হচ্ছে রাষ্ট্রীয়
সম্মাননা। স্মরণ করা হচ্ছে তাদের
কৃতিত্ব। তবে দেশের জন্য যিনি এতবড়
সম্মান বয়ে আনলেন, স্বাধীনতার ৪২
বছর পরও সেই এম হোসেন
আলীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান
দেয়নি কোনো সরকার।
এমনকি তিনি পাননি মুক্তিযোদ্ধার
কোনো স্বীকৃতি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এম
হোসেন আলী ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল
পাকিস্তান দূতাবাসের ৬৫ জন
কর্মী নিয়ে মুজিবনগর সরকারের
প্রতি আনুগত্য প্রকাশ
করে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে ব
পতাকা ওড়ান। লাভ করেন
বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম
রাষ্ট্রদূত হওয়ার দুর্লভ সম্মান।
এম হোসেন আলী মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস
বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্ব জনমত
গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
১৯৭২ সালের
জানুয়ারিতে বাংলাদেশের তথ্য
সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব নিযুক্ত
হন। তিনি ১৯৭৩
সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের
প্রথম রাষ্ট্রদূত, ১৯৭৬-৭৯ পর্যন্ত
জার্মানির �রাষ্ট্রদূত ও
পরে কানাডার হাইকমিশনার নিযুক্ত
হন। সেখানেই ১৯৮১ সালের ২
জানুয়ারি মারা যান মুক্তিযুদ্ধের এই
সংগঠক।
সম্প্রতি তার জন্মভূমি পাবনার
ভাঙ্গুড়া উপজেলার পার-
ভাঙ্গুড়া গ্রামে গিয়ে স্থানীয়দের
সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এম
হোসেন
আলীকে নিয়ে এলাকাবাসী গর্ববোধ
করলেও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
থেকে অনেকটাই যেন বিস্মৃত
হয়ে গেছেন তিনি। তার
অবদানকে স্মরণ করছে না রাষ্ট্রের
সর্বোচ্চ মহল।
এম হোসেন আলীর
কথা জানতে চাইলে তার
চাচাতো ভাই পার-ভাঙ্গুড়া গ্রামের
বাসিন্দা গোলাম কিবরিয়া (৯০)
বলেন, ‘তিনি খুবই ভালো ও সৎমানুষ
ছিলেন। আমরা চাই তাকে রাষ্ট্রীয়
সম্মান দেওয়া হোক।’
জাতিসংঘের সাবেক
কর্মচারী ভাঙ্গুড়া উপজেলার
পাথরঘাটা গ্রামের
বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা আ ন ম
মেজবাহুর রহমান রোজও একই
দাবি জানান।
ভাঙ্গুড়া হাজী জামাল উদ্দিন
ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো.
শহিদুজ্জামান বলেন,
‘স্বাধীনতাযুদ্ধে অবদানের কথা স্মরণ
করে একজন রাষ্ট্রদূত হিসেবে অন্তত
এম হোসেন আলীর মূল্যায়ন
হওয়া উচিত।
ভাঙ্গুড়া তথা পাবনাবাসী হিসেবে
দাবি,
তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে মরণোত্তর
সম্মাননা দেওয়া হোক।’
হাজী জামাল উদ্দিন
ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মাহবুব-উল
আলম বাবলু বলেন, ‘আমাদের
দাবি ছিল এম হোসেন আলীর
স্মরণে ১৮ এপ্রিলকে ‘পতাকা উত্তোলন
দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হোক,
পাঠ্যপুস্তকে তার অবদানের
কথা লেখা ও একটি স্মৃতিস্তম্ভ
নির্মাণ করা হোক। কিন্তু
সে দাবি আজও উপেক্ষিত রয়ে গেছে।’
এদিকে প্রয়াত এম হোসেন আলীর
স্মৃতি ধরে রাখতে তার
জন্মভূমি পাবনার পার-
ভাঙ্গুড়া গ্রামে এলাকাবাসীর
উদ্যোগে ‘মুক্তিযোদ্ধা হোসেন
আলী উদ্যান’ নির্মাণ করা হয়েছে।
তবে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে তার
বসতবাড়িটি।
৪২ বছর পেরিয়ে গেলেও বিদেশের
মাটিতে প্রথম বাংলাদেশের
পতাকা ওড়ানোর স্বীকৃতি অন্তত এম
হোসেন আলীকে দেওয়া হোক,
রাষ্ট্রীয়ভাবে তাকে স্মরণ করা হোক,
দেওয়া হোক তার যথাযথ সম্মান-
এমনটাই প্রত্যাশা পাবনাবাসীর।